Uncategorized

ওয়েম্বলির মহারণ: হামজাদের সামনে ৩৬৫ কোটি টাকার ম্যাচ

হামজাদের সামনে ৩৬৫ কোটি টাকার ম্যাচ


লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম আজ এক ঐতিহাসিক ফুটবল ম্যাচের সাক্ষী হতে চলেছে। চ্যাম্পিয়নশিপ প্লে-অফ ফাইনালের মহারণে মুখোমুখি হবে হামজা চৌধুরীশেফিল্ড ইউনাইটেড এবং সান্ডারল্যান্ড। এই ম্যাচটি কেবল ফুটবল মাঠে এক জয়-পরাজয়ের লড়াই নয়, এটি প্রিমিয়ার লিগে উত্তরণের এবং একই সাথে ৩৬৫ কোটি টাকার বিশাল আর্থিক পুরস্কারের এক রোমাঞ্চকর যুদ্ধ। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফুটবল লিগে দলগুলোর উত্থান-পতন একটি সাধারণ ঘটনা, যেখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্লাব নিচের স্তর থেকে উপরের স্তরে উন্নীত হয়। শেফিল্ড-সান্ডারল্যান্ড ম্যাচটিও এই উত্থান-পতনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে এর প্রেক্ষাপট এটিকে অন্য সব প্লে-অফ ম্যাচ থেকে আলাদা করেছে।
ফুটবলের সবচেয়ে দামি ম্যাচ
চ্যাম্পিয়নশিপ প্লে-অফ ফাইনালকে ‘ফুটবলের সবচেয়ে দামি ম্যাচ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর কারণ খুবই স্পষ্ট: এই ম্যাচের বিজয়ী দল প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬৫ কোটিরও বেশি টাকা, তাদের অ্যাকাউন্টে যোগ করার সুযোগ পাবে। এই বিপুল অঙ্কের অর্থ কেবল প্রিমিয়ার লিগের আর্থিক সামর্থ্যের কারণেই সম্ভব। বিশ্বের অন্যতম সেরা ও সবচেয়ে অর্থকরী ফুটবল লিগ হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ প্রতি মৌসুমে ২০টি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর পয়েন্ট তালিকার শেষ তিনটি দল দ্বিতীয় স্তরের চ্যাম্পিয়নশিপে নেমে যায়, আর চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শীর্ষ দুটি দল এবং প্লে-অফের মাধ্যমে আরও একটি দল প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসে। এ বছর এরই মধ্যে লিডস ইউনাইটেড ও বার্নলি চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। এখন তৃতীয় ও শেষ স্থানটির জন্য লড়ছে সান্ডারল্যান্ড ও শেফিল্ড ইউনাইটেড।
প্রিমিয়ার লিগের হাতছানি ও আর্থিক গুরুত্ব
শেফিল্ড ইউনাইটেড ২০২৩-২৪ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে খেললেও সেখানে টিকে থাকতে পারেনি। অন্যদিকে, সান্ডারল্যান্ড ২০১৭ সালে অবনমিত হওয়ার পর থেকে এখনো প্রিমিয়ার লিগে ফিরতে পারেনি। এই ম্যাচটি উভয় দলের জন্য প্রিমিয়ার লিগে ফেরার এক অসাধারণ সুযোগ বয়ে এনেছে, পাশাপাশি হাতছানি দিচ্ছে বিশাল অঙ্কের অর্থের। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এবং এর আর্থিক কাঠামোও অত্যন্ত শক্তিশালী।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ প্রতিটি অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে সম্প্রচারস্বত্ব ও স্পনসরশিপ থেকে প্রাপ্ত আয় ভাগ করে দেয়। এছাড়াও, ম্যাচ ডে থেকেও দলগুলো ভালো আয় করে থাকে। সিবিএস স্পোর্টসের তথ্যমতে, সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগে উঠলেই একটি দল প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো আয় করে থাকে। ২০২০ সালে আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চ্যাম্পিয়নশিপ প্লে-অফ ফাইনালে জয়ী দল ১৬.৭ কোটি থেকে ৩২.৮ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়তি আয়ের মালিক হতে পারে। ২০২০-২১ মৌসুমের অফিশিয়াল তথ্য অনুযায়ী, সে মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ২০টি দলের মধ্যে শুধু সম্প্রচার আয় বাবদই ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। এই আয় ইংল্যান্ডের ভেতরের এবং বাইরের উভয় ধরণের সম্প্রচারস্বত্ব থেকে আসে। মজার বিষয় হলো, কোনো দল প্রিমিয়ার লিগে যত বেশি সময় টিকে থাকে, তাদের আয়ের পরিমাণও তত বাড়ে। এমনকি, কোনো দল চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রিমিয়ার লিগে ওঠার এক মৌসুম পরই যদি আবার নেমে যায়, তাহলেও তারা ‘প্যারাশুট মানি’ নামে একটি অংশ পায়, যা তিন বছর ধরে দেওয়া হয়। এটি অবনমিত হওয়া ক্লাবগুলোর জন্য একটি আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে।
হামজা চৌধুরীর ভূমিকা
এই হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে সকলের নজর থাকবে বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর দিকে। বর্তমানে তিনি লেস্টার সিটি থেকে ধারে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলছেন। মৌসুম শেষে তিনি লেস্টারে ফিরে যাবেন নাকি শেফিল্ড তাকে স্থায়ীভাবে কিনে নেবে, তা এখনো অজানা। তবে শেফিল্ডের হয়ে মৌসুমের এই শেষ বেলায় ‘ফুটবলের সবচেয়ে দামি ম্যাচ’টি খেলতে যাচ্ছেন তিনি, যা তার ক্যারিয়ারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তার পারফরম্যান্স শেফিল্ডের ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
আজকের এই ম্যাচটি কেবল দুটি দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, এটি ফুটবল বিশ্বের আর্থিক ক্ষমতা এবং প্রতিযোগিতা মূলকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ১ মিনিটে শুরু হতে যাওয়া এই ম্যাচটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। ওয়েম্বলির সবুজ গালিচায় যে দলই জিতুক না কেন, তারা কেবল একটি ট্রফিই জিতবে না, তারা জিতবে এক বিশাল আর্থিক সাম্রাজ্যে প্রবেশের টিকিট।

হামজা চৌধুরীর সকল জার্সি পেতে এখানে লগ ইন করুন www.fotlanderbd.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *