
পাঁচ বছর আগের এক বিষণ্ণ সন্ধ্যা। ১৪ আগস্ট, ২০২০। বিশ্ব তখন কোভিড-১৯ মহামারির কবলে, যার প্রভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচগুলো নেমে এসেছিল এক লেগে। লিসবনের মাঠে সেদিন এক অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ নেমে এসেছিল বার্সেলোনার উপর। বায়ার্ন মিউনিখের অপ্রতিরোধ্য আক্রমণের সামনে ৮-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে পর্যুদস্ত হয়েছিল কাতালান ক্লাবটি। সেই বায়ার্ন দলের ডাগআউটে দাঁড়িয়ে যিনি ১৯৪৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বার্সেলোনাকে আট গোল হজম করার তিক্ত স্বাদ দিয়েছিলেন, সেই ভদ্রলোকের নাম হান্সি ফ্লিক।
সময়ের স্রোতে অনেক কিছুই পাল্টে যায়। সেই ফ্লিক আজ বার্সেলোনার ডাগআউটে। কাতালান ক্লাবটির কোচ হিসেবে নিজের প্রথম মৌসুমেই তিনি জিতে নিয়েছেন ঘরোয়া ‘ট্রেবল’ – লা লিগা, কোপা দেল রে এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে অবশ্য তাদের যাত্রা থেমেছে সেমিফাইনালেই। তবে সামগ্রিকভাবে এই মৌসুম বার্সেলোনার জন্য অত্যন্ত সফল হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে। সম্ভবত এই সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপই বার্সেলোনায় এই জার্মান কোচের চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে, যা গতকাল আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।
২০২৪ সালের মে মাসে দুই বছরের চুক্তিতে বার্সেলোনার কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ফ্লিক। সেই হিসেবে আগামী মৌসুম পর্যন্ত তাঁর ক্যাম্প ন্যু-এর ডাগআউটে থাকার কথা ছিল। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, ফ্লিকের পারফরম্যান্সে বার্সেলোনা এতটাই সন্তুষ্ট যে, তারা পূর্বেই তাঁর চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধি করেছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত বার্সেলোনার কোচ হিসেবে দেখা যাবে হান্সি ফ্লিককে।
বার্সেলোনার পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে ফ্লিকের প্রতি সেই সন্তুষ্টির স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘হান্সি ফ্লিক তাঁর প্রথম মৌসুমেই বার্সা সমর্থকদের অনেক কারণে আনন্দিত করেছেন; দলকে তিনি যে বিশ্বাস এনে দিয়েছেন, রূপকথার মতো ঘুরে দাঁড়ানো এবং শিরোপা জেতানোর জন্য। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম মৌসুমেই তিনি ক্লাবে রোমাঞ্চ সৃষ্টি করেছেন এবং বার্সাকে আবারও ইউরোপে একটি ভয়ংকর দলে রূপান্তরিত করেছেন।’
বার্সেলোনার ডাগআউটে হান্সি ফ্লিকের প্রথম মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। এই সময়ে দলের পারফরম্যান্সে স্পষ্টতই উন্নতি দেখা গেছে।
২০২০ সালে যখন বার্সেলোনাকে ৮ গোল দিয়েছিল তাঁর দল বায়ার্ন মিউনিখ, সেই বছরই বায়ার্নকে ‘ট্রেবল’ জিতিয়েছিলেন ফ্লিক। এরপর, ২০২১ সালে তিনি জার্মানি জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেন। দুই বছর পর, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি সেই পদ থেকে বরখাস্ত হন এবং পরবর্তীতে বার্সেলোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ফ্লিক এই মৌসুমে স্কোয়াডে অভিজ্ঞ এবং তরুণ খেলোয়াড়দের একটি চমৎকার মিশ্রণ ঘটিয়ে বার্সেলোনাকে সাফল্য এনে দিয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সী অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কির সাথে ১৭ বছর বয়সী বিস্ময়বালক লামিনে ইয়ামাল, ২২ বছর বয়সী প্রতিভাবান পেদ্রি এবং ২৮ বছর বয়সী রাফিনিয়ার মতো খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি দারুণ সমন্বয় তৈরি করেছেন। এই সমন্বয়ের ফলস্বরূপ মাঠের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।
ট্রান্সফারমার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে বার্সেলোনা সমস্ত প্রতিযোগিতা মিলিয়ে প্রতি ম্যাচে গড়ে ২.৩১ পয়েন্ট অর্জন করেছে। স্পেনের শীর্ষ লিগে এই মরসুমে এটি যেকোনো কোচের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স। রিয়াল মাদ্রিদের বিদায়ী কোচ কার্লো আনচেলত্তি এই মৌসুমে তাঁর দলকে ম্যাচপ্রতি গড়ে ২.১৩ পয়েন্ট এনে দিয়ে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কোচ দিয়েগো সিমিওনে ১.৯৬ গড় পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন।
গত আট বছরে বার্সেলোনার কোনো কোচই ম্যাচপ্রতি এত বেশি পয়েন্ট ক্লাবকে এনে দিতে পারেননি। এর আগে, সর্বশেষ ২০১৭ সালে লুইস এনরিকে বার্সেলোনার কোচ থাকাকালীন ম্যাচপ্রতি ২.৪১ পয়েন্ট এনে দিয়েছিলেন, যিনি বর্তমানে প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শুধু পয়েন্টের হিসেবেই নয়, গোলের ক্ষেত্রেও ফ্লিকের বার্সেলোনা ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি লিগের মধ্যে যৌথভাবে শীর্ষে অবস্থান করছে। লা লিগায় ইতিমধ্যেই শিরোপা নিশ্চিত করা বার্সেলোনা আরও একটি লিগ ম্যাচ খেলবে। এই পর্যন্ত লিগে ফ্লিকের দল ৯৯টি গোল করেছে। জার্মানির বুন্দেসলিগায় শিরোপা নিশ্চিত করা বায়ার্ন মিউনিখও সমান সংখ্যক, অর্থাৎ ৯৯টি গোল করেছে। এই পরিসংখ্যান স্পষ্টতই ফ্লিকের অধীনে বার্সেলোনার আক্রমণাত্মক সক্ষমতার পরিচয় বহন করে।
: স্পোর্টসের সকল ক্লাবের জার্সি কিনতে ভিজিট করুন ফিটল্যান্ডার ওয়েবসাইটে।