Sports News

পারভেজের রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের জয়যাত্রা শুরু

শারজায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পারভেজ হোসেনের বিধ্বংসী সেঞ্চুরি এবং ছক্কার রেকর্ডের পরও জয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ২৭ রানে ম্যাচ জিতলেও ১৯২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা স্বাগতিকদের শেষ মুহূর্তের ব্যাটিং দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তবে মোস্তাফিজুর রহমানের নিয়ন্ত্রিত ডেথ বোলিং এবং আমিরাতের ব্যাটসম্যানদের ভুলে শেষ হাসি হাসে বাংলাদেশই। এই জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল তারা, সিরিজের শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে পরশু।
পারভেজের কীর্তি আর অল্পের জন্য রক্ষা
ম্যাচসেরা পারভেজ হোসেনের মুখে স্বস্তির হাসি থাকলেও, জয়টা হাতছাড়া হলে তার সব কীর্তিই ম্লান হয়ে যেত। এদিনের ম্যাচে ব্যাট হাতে যা ইচ্ছা তাই করেছেন তিনি। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে বাউন্ডারি থেকে সর্বোচ্চ ৭৪ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৯টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন, যার মধ্যে দুটি বল মাঠের বাইরে হারিয়ে যায়।
এই বিধ্বংসী ইনিংসে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরির দেখা পান পারভেজ। এর আগে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে ৬০ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল, সেই ম্যাচে তিনি ৬৩ বলে ১০৩ রান করেছিলেন। পারভেজ এদিন তামিমের চেয়েও কম, মাত্র ৫৩ বলে সেঞ্চুরি করে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন। ফিফটি করেছিলেন ২৮ বলে। তবে তার এই অসাধারণ ইনিংসের পরও জয় নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রেখেছেন বোলাররা, বিশেষ করে মোস্তাফিজুর রহমান।
বোলারদের কৃতিত্ব ও ব্যাটিংয়ে উন্নতির অবকাশ
শেষ ৬ ওভারে আমিরাতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৬০ রান। এমন সময়ে মোস্তাফিজুর রহমান তার জাত চেনান। আমিরাত ইনিংসের শেষদিকের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বল করতে এসে দুই ওভারে মাত্র ৭ রান দেন এই বাঁহাতি পেসার এবং তুলে নেন দুটি উইকেট। পুরো ৪ ওভারে ১৭ রান খরচায় তার শিকার ২ উইকেট। ক্রিজে তখন ২১ বলে ৪২ রান করা আসিফ খান থাকায় ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। তানজিম হাসানও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে অবদান রাখেন। ইনিংসের ১২তম ও ১৪তম ওভারে তিনি ৩৯ বলে ৫৪ রান করা ওপেনার মুহাম্মদ ওয়াসিম এবং ২২ বলে ৩৫ রান করা রাহুল চোপড়াকে ফিরিয়ে দেন।
পারভেজের এমন অতিমানবীয় ইনিংসের দিনেও দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। যেখানে পারভেজ একাই মেরেছেন ৯টি ছক্কা, সেখানে দলের বাকি সবাই মিলে মেরেছেন মাত্র ৪টি। অবশ্য তাতেই বাংলাদেশের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার (মোট ১৩টি) রেকর্ড হয়েছে, এর আগের রেকর্ড ছিল ১২টি।
ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান (২১) এসেছে অতিরিক্ত খাত থেকে। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাওহিদ হৃদয় ১৫ বলে ২০ রান করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। এই কারণেই প্রথম ১০ ওভারে ১০৩ রান তোলার পরও বাংলাদেশের ইনিংস ১৯১ রানের বেশি এগোয়নি, যা ২২০-২৩০ হতে পারতো। আরব আমিরাতের বোলিং তেমন ধারালো না হলেও সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
পাওয়ারপ্লেতে ৫৫ রান তোলার পর মাঝের ওভারগুলোতে, বিশেষ করে ১১ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যে রানের গতি কমে যায়। এই পাঁচ ওভারে পারভেজ ও জাকের মিলে মাত্র ৩১ রান যোগ করতে পারেন। শেষ ৫ ওভারে ৫৭ রান আসলেও, ইনিংসের শেষ ওভারে অতিরিক্ত ৫ রানসহ আসে মাত্র ৬ রান। সব মিলিয়ে ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতির অবকাশ স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *