
ফুটবলবিশ্ব আজ এক মহাকাব্যিক এল ক্লাসিকোর সাক্ষী হচ্ছে। মৌসুমের শেষবারের মতো মুখোমুখি বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদ, আর এই ম্যাচটি উপহার দিচ্ছে উত্তেজনা, গোল আর নাটকীয়তার এক অভাবনীয় মিশেল। এই মুহূর্তে খেলা লাইভ চলছে এবং স্কোরলাইন বলছে বার্সেলোনা ৪ – ৩ গোলে এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের থেকে। তবে এই ব্যবধান তৈরি হওয়া এবং ম্যাচের গতিপ্রকৃতি ছিল রীতিমতো শ্বাসরুদ্ধকর। কিলিয়ান এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক সত্ত্বেও শেষ হাসি কারা হাসে, তা জানতে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দল একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আক্রমণ আর প্রতি-আক্রমণে বার্নাব্যুর গ্যালারি যেন মুহুর্মুহু কেঁপে উঠছে। রিয়াল মাদ্রিদ তাদের চেনা ছন্দে শুরু করলেও, বার্সেলোনাও বুঝিয়ে দেয় যে তারা ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।
প্রথম গোলের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় ভিনিসিয়াস জুনিয়রের বাড়ানো বল ধরে ঠান্ডা মাথায় গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই গোল যেন বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের আরও তেতে তোলে। গোল হজম করার পরেই তারা আরও সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণে ঝাঁপায়।
এর ফলস্বরূপ, ম্যাচের ২৫ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে পেদ্রির বাড়ানো একটি দারুণ থ্রু বল ধরে ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে বার্সেলোনার হয়ে সমতা ফেরান লামিনে ইয়ামাল। ইয়ামালের এই গোলটি ছিল দেখার মতো, যা বার্সার সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে উন্মাদনা সৃষ্টি করে।
তবে রিয়াল মাদ্রিদও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। ম্যাচের ৩৫ মিনিটের মাথায় ডি-বক্সের মধ্যে ফাউলের শিকার হন ভিনিসিয়াস জুনিয়র, এবং রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। স্পটকিক থেকে গোল করতে ভুল করেননি কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই গোলের মাধ্যমে রিয়াল আবারও ম্যাচে লিড নেয় এবং এমবাপ্পে স্পর্শ করেন নিজের দ্বিতীয় গোলটি।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে খেলার গতি আরও বাড়ে। দুই দলই মরিয়া হয়ে চেষ্টা করতে থাকে আরও একটি গোল আদায় করার জন্য। অবশেষে, ৪২ মিনিটের মাথায় রবার্ট লেভানডোভস্কির বাড়ানো ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে বার্সেলোনার হয়ে আবারও সমতা ফেরান ফেরান তোরেস। প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-২ গোলের সমতায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বার্সেলোনা কিছুটা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে। তাদের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ ছিল বেশ solid, যার ফলে রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণগুলো তেমন একটা গুছিয়ে উঠতে পারছিল না।
ম্যাচের ৫৬ মিনিটের মাথায় বার্সেলোনা তাদের তৃতীয় গোলের দেখা পায়। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের নেওয়া একটি নিচু শট রিয়ালের গোলরক্ষককে পরাস্ত করে জালে জড়ায়। এই গোলে বার্সেলোনা ম্যাচে প্রথমবারের মতো লিড নেয় এবং বার্সার সমর্থকদের উল্লাস বাঁধভাঙা হয়।
তবে কিলিয়ান এমবাপ্পে তখনও ছিলেন নীরব ঘাতকের ভূমিকায়। ম্যাচের ৬৭ মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের পাস ধরে আবারও গোল করেন এমবাপ্পে এবং পূর্ণ করেন এল ক্লাসিকোতে নিজের হ্যাটট্রিক। এই গোলটি ছিল অসাধারণ, যেখানে এমবাপ্পের গতি আর ফিনিশিংয়ের দক্ষতা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-৩।
এরপর খেলা আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। দুই দলই জয়সূচক গোলের জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণ করতে থাকে। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার আগমুহূর্ত পর্যন্ত কেউই এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ ছিল।
অবশেষে, ম্যাচের ৮৫ মিনিটের মাথায় বার্সেলোনা তাদের চতুর্থ গোলের দেখা পায়। একটি কর্নার কিক থেকে রোনাল্ড আরাউজোর শক্তিশালী হেড রিয়ালের জালে আশ্রয় নেয়। এই গোলটি বার্সার সমর্থকদের জন্য যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে আনে। স্কোরলাইন এই মুহূর্তে বার্সেলোনা ৪ – ৩ রিয়াল মাদ্রিদ।
এখনও কিছু সময় বাকি এবং খেলার গতিপ্রকৃতি যা, তাতে আরও নাটকীয় কিছু দেখার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রিয়াল মাদ্রিদ নিশ্চয়ই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবে সমতা ফেরানোর জন্য, অন্যদিকে বার্সেলোনা চাইবে এই মূল্যবান লিড ধরে রাখতে।
কিলিয়ান এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক নিশ্চিতভাবেই এই ম্যাচের একটি উজ্জ্বল দিক। তবে বার্সেলোনার সামগ্রিক দলীয় প্রচেষ্টা এবং লড়াকু মানসিকতা তাদের এই মুহূর্তে এগিয়ে রেখেছে।
খেলা শেষ হওয়ার পরে এই ম্যাচের সম্পূর্ণ ফলাফল এবং আরও বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে আমরা আপনাদের কাছে ফিরে আসব। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকুন এবং এই রোমাঞ্চকর এল ক্লাসিকোর শেষ মুহূর্তগুলো উপভোগ করুন!
আপনার মতে, শেষ পর্যন্ত কোন দল হাসবে? কমেন্ট করে জানান!